নিঃসন্দেহে সুস্থ অন্তর ও নিষ্কলুষ হৃদয় প্রকৃত স্বাদ ও পূর্ণ আনন্দ লাভ করে একমাত্র আল্লাহ-র মহব্বত ও ভালোবাসাতে; তিনি যা কিছু পছন্দ করেন সেসবের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য অর্জন করাতে; তিনি ছাড়া অন্যান্য সকল প্রেমাস্পদ থেকে বিমুখ হওয়াতে।
এ ভালোবাসা তাওহীদের সাক্ষ্য لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই’ এর প্রকৃত তাৎপর্য। এ ভালোবাসাই ইবরাহীম খলীল-র মিল্লাত ও খাতামুল মুরসালীন মুহাম্মাদ ﷺ-র সুন্নাত।
যে সকল বিষয় মানুষের অন্তর বিনষ্ট করে এবং আল্লাহ থেকে বিচ্ছিন্ন ও দূরে ঠেলে দেয়, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা ও প্রেমাসক্তির ব্যাধি।
এ ব্যাধি আক্রান্ত ব্যক্তিকে ধ্বংস করে, কল্যাণের পথ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, গোমরাহিতে নিপতিত করে, হেদায়েতের পর চরম ভ্রান্তিতে নিক্ষেপ করে।
এ ব্যাধি অন্তরের লাঞ্ছনা, কলবের জং, দুনিয়াতে অপদস্থতা ও আখেরাতে আযাব।
এ ব্যাধি সঙ্গে নিয়ে যায় বহু প্রাণ। এ ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি কখনও আরামবোধ করে না, স্বস্তি পায় না। বরং এ হচ্ছে কূল-কিনারাহীন এক মহাসমুদ্র। যে-ই তাতে পড়ে সে-ই ডুবে যায়। কারণ, এর কোনো কূল-কিনারা নেই।
নিশ্চয় অহংকার ও আত্মম্ভরিতা এমন এক আত্মিক ব্যাধি, যা মানুষের চরিত্রকে চরমভাবে কলুষিত করে। মানুষকে সত্য ও হেদায়েতের পথ থেকে বিচ্যুত করে গোমরাহি ও ভ্রষ্টতার দিকে নিয়ে যায়। কারণ, অহংকার ও আত্মম্ভরিতা যখন কারও মাঝে বাসা বাঁধে এবং তার বিবেক-বুদ্ধি ও ইচ্ছার উপর বিজয়ী হয়ে যায়, তখন তাকে অত্যন্ত কঠোরতার সাথে এবং প্রবলভাবে সত্য-প্রত্যাখ্যান ও সত্যকে অস্বীকার করার দিকে নিয়ে যায়। ফলে সে সত্যের নিদর্শনও মুছে ফেলতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। অতঃপর অহংকার ও আত্মম্ভরিতা তাকে নিয়ে যায় এমন এক স্তরে, যখন সে তার অন্তঃসারশূন্য আপাত মোহনীয় ও চটকদার কথার মাধ্যমে বাতিলকে সুসজ্জিত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত করে উপস্থাপন করতে থাকে; যার কোনো যথার্থতা ও বাস্তবতা নেই। এর পাশাপাশি সে ছোট-বড় অন্যান্য সকল মানুষকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখতে থাকে এবং তুচ্ছ ও নীচ ভাবতে থাকে।
বক্ষ্যমাণ বইয়ে আমরা অহংকারের সংজ্ঞা বর্ণনা করার চেষ্টা করব। পাশাপাশি আলোচনা করব অহংকার ও আত্মম্ভরিতার পার্থক্য, এর ক্ষতি, নিদর্শন, কারণ ও মানব জীবনে এর কী প্রভাব পড়ে তা নিয়ে। সবশেষে আলোচনা করব তার চিকিৎসা ও প্রতিকার নিয়ে ইনশাআল্লাহ।
এই গ্রন্থটিতে আছে-
১. ইসলামী বর্ষপঞ্জী অনুসারে প্রতি মাসের ৩০টি পাঠ।
২. সমাজ ও ব্যক্তি সংশোধনের জন্য প্রতিটি পাঠ প্রাঞ্জল ও সাবলীল।
৩. প্রতি পৃষ্ঠায় একটি করে পাঠ সমাপ্ত।
৪. প্রত্যেক আরবী মাস সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
৫. পুরুষ, নারী ও শিশুদের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।
৬. একাকী বা সম্মিলিতভাবে প্রতিদিন মাত্র ৩ মিনিটের অধ্যয়ন।
৭. আকায়েদ, এবাদত, মুআমালাত, মুআশারাত, ও আখলাক তথা শরীয়তের মৌলিক সব বিষয় অবলম্বন করে রচিত।
এ গ্রন্থে মূলত সেসকল বিষয়বস্তুই স্থান পেয়েছে, মানুষ যেগুলোর প্রয়োজন তীব্রভাবে অনুভব করে; যেগুলোর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও সমাধান করাও জরুরী বলে মনে করে। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের জবিনযাত্রায় উদ্ভূত সমসাময়িক জটিলতা, ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিকূলতা, সেসবের কারণ ও সমাধানের পন্থা, সর্বোপরি সেসব থেকে নিরাপদ ও বেঁচে থাকার ফর্মুলা- ইত্যাদি।
মাতৃত্ব একটি পুরস্কার। শিশুর সঠিক পরিচর্যায় মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। একইসাথে কাজটি অত্যন্ত জটিল ও চ্যালেঞ্জিংও বটে। কঠিন এই দায়িত্ব পালনে একজন মা-কে উত্তীর্ণ হতে হয় বহু পরীক্ষায়। আপনার হাতের এই বইটিতে প্রতিটি মা তার ছোট্ট সোণামনিকে কীভাবে লালন-পালন করবে, তার বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে মৌলিকভাবে কোন বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ্য রাখবে- সে সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হয়েছে।
আশা করছি, বইটি পড়ে পাঠকবৃন্দ শিশুদের যত্ন ও পরিচর্যা সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করতে পারবেন। জানতে পারবেন বাচ্চা লালন-পালনে ইসলামের সঠিক দীক্ষা। একইসাথে অবগত হতে পারবেন শিশুর প্রতিপালনে আমাদের মা-দাদীদের অভিজ্ঞতালব্ধ অমূল্য নীতিমালার সারনির্যাস। বিজ্ঞ পিতা-মাতার অমূল্য পরামরশ ও দুষ্পাপ্য কিছু টিপস। সদ্য মা হতে চলা নারীরা খুঁজে পেতে পাবেন সঠিক গাইডলাইন। এছাড়াও বইটি চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী এবং মা ও শিশু সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্যেও উপকারী হবে।
সর্বোপরি, একজন মুসলিম মা তার সকল কাজে একমাত্র আল্লাহর ওপরই ভরসা রাখবেন এবং তাঁর কাছেই সাহায্য ও সঠিক পথের সন্ধান চাইবেন- এটাই কাম্য।
একজন সমাজচ্যুত নারীর আত্নকাহিনী। যাদেরকে সমাজের দূষণ গণ্য করা হয়, অথচ তারা এই সমাজেরই সৃষ্টি। বাংলা শব্দে যাদের ডাকা হয় “পতিতা”। বইটিতে এমনি এক সম্ভ্রান্ত ঘরের নারীর আত্নকাহিনী ফুটে উঠেছে, যাকে সমাজ বাধ্য করে এই পথে নামতে।
লেখক এনায়তুল্লাহ আল তামাশ সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই, “ঈমানদীপ্ত দাস্তান” যারা পড়েছেন সবার নিকট একবাক্যে পরিচিত। ব্যক্তি জীবনে শেষের দিকে সাংবাদিকতা তার পেশা ছিল। বইটি মূলত তার সাংবাদিকতার পেশা থেকেই নেয়া সাক্ষাৎকার এর সংকলন। ব্যাহত দৃষ্টিতে বইয়ে কিছু অশ্লীল বর্ণনা দেখে খারাপ মনে হতে পারে, তবে বইটি যেহেতু একজন পতিতার সাক্ষাৎকার, তাই আমাদের উচিত হবে বর্ণনাগুলোকে তার পার্সপেক্টিভ থেকেই দেখা। বইটি লেখার পিছনে মূল উদ্দেশ্য, জাতিকে সমাজের প্রকৃতরূপ চেনানো, নারীরা এই সমাজের প্রতিটি স্তরে কীভাবে ভোগ্যপণ্য গণ্য হয়, সেই প্রমাণিকতা একটি বাস্তব জীবনের আলোকে উপস্থাপন। হ্যাঁ বইটি কেবল প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য উপযোগী। মাওলানা আব্দুল আলিমের অনুদিত।
পড়ার ক্ষেত্রে অনেক মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বইয়ের প্রতি অনীহা ও বিতৃষ্ণাভাব। যা অনেক সময় বৈরী রূপ ধারণ করে। অনেক মানুষই বই খোলার পর দ্রুত বিরক্তি ও ক্লান্তিতে আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ করে থাকেন। বিশেষ করে কঠিন ধরণের বইগুলোর ক্ষেত্রে এমনটা বেশি হয়ে থাকে। সেজন্যই বর্তমানে আমরা খুবই হতাশাজনক চিত্র দেখেতে পাচ্ছি। তা হলো, ধর্মীয় বই-পুস্তককে উপেক্ষা করা এবং অনর্থক ও ফালতু গল্পের বই, রঙ-বেরঙের সচ্রি ম্যাগাজিন। নাচ-গান ও খেলাধুলা বিষয়ক পত্রিকার প্রতি আকৃষ্ট হওয়া। ফলে আমাদের শত্রুরা দম্ভের স্বরে বলে, মুসলিমরা বইটই পড়ে না। পড়লেও বুঝে না। আর বুঝলেও গভীর থেকে অনুধাবন করে না। এ সম্পর্কেই এ বইটি।
আল্লাহ এই দুনিয়াকে পরীক্ষার জায়গা বানিয়েছেন এবং নিজের বিধি-নিষেধ বান্দা-বান্দীর কাঁধে অর্পণ করে তাদেরকে পরীক্ষা করছেন। তিনি দেখছেন যে, তারা আপন খালেক-মালেকের বিধি-নিষেধের পূর্ণ আনুগত্যে লিপ্ত হয় কি না।
ভালো লাগা যখন ভালোবাসায় রূপ নেয়, মানুষটা ততই আপন হয়ে ওঠে। প্রতি মুহূর্তে তার কথা স্মরণ হতে থাকে। তার সান্নিধ্য থেকে চব্বিশ ঘণ্টা দূরে থাকা—কয়েক বছরের মতো দীর্ঘ লাগে। তার সাথে কথা বলতে না পারার ব্যথা বুকে ছুরি মারার চেয়েও তীব্র হয়ে ওঠে।
এ হচ্ছে এক সৃষ্টির প্রতি আরেক সৃষ্টির ভালোবাসা। আর ভালোবাসা নামক অনুভূতির স্রষ্টা তো আল্লাহ তা’আলা-ই। কিন্তু আমরা কি আল্লাহকে এই পরিমাণ ভালোবাসতে পেরেছি? কখনো কি এভাবে আল্লাহকে মিস করেছি? সত্যিই কি আমরা আল্লাহকেই সর্বাত্মক ভালোবাসি?
রাসুল সা. আমাদের জীবন-সাফল্যের জন্য একটি সুসমৃদ্ধ নির্দেশনা
দিয়েছেন- ‘ইহফাযিল্লাহ, ইয়াহফাযকা’। ‘তুমি আল্লাহর বিধান রক্ষা কর, আল্লাহ তোমার জীবনে সুরক্ষা দিবেন’।
কেয়ামত পর্যন্ত রাসুল সা.এর এই বাণী সত্য, সুপ্রতিষ্ঠিত। জীবনের পরতে পরতে পরিলক্ষিত, বাস্তবায়িত। মুসলমানের অন্তরে অন্তরে প্রোত্থিত, অনুরণিত। এ যেন ঈমানদারের নির্বিঘ জীবন বাঁচার অনাদি আশা, অপার প্রেরণা।
আল্লাহ কে যে ভয় করবে, পরিশেষে সে প্রশংসিত হবে। সবল-দুর্বল সকলের অনিষ্ট থেকে সুরক্ষা পাবে। বিপদে আপদে যে আল্লাহ কে ভুলে যাবে, সে যেন মনে রাখে, আল্লাহ ছাড়া অন্যসব সাহায্যকারী ব্যর্থ, অক্ষম। সুতরাং আল্লাহ রজ্জু আঁকড়ে ধরো, পৃথিবীর সকল সাহায্যক্ষেত্র বিশ্বাসভঙ্গ করলেও আল্লাহ আছেন বিশ্বাসের স্তম্ভ, আল্লাহ আছেন সদা-সর্বত্র।
পবিত্র কোরান ও হাদীসের বিশাল ভান্ডারে আল্লাহ তায়ালা কোন বান্দাদের ভালবাসেন,কাদের ঘৃণা করেন,কী কী কাজ পছন্দ অপছন্দ করেন তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন।সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং বিরাগভাজন হওয়ার বিষয়গুলো নিয়েই সাজানো হয়েছে “আল্লাহর পছন্দ-অপছন্দ” বইটি। এতে আল্লাহর পছন্দ-অপছন্দের ২১১টি টপিক আছে।প্রতিটি টপিকের সাথে সম্পর্কিত কুরআনের যত আয়াত ও হাদীস আছে তা লেখক তন্ন তন্ন করে খুঁজে রেফারেন্স সহ তুলে ধরেছেন।কুরানের আলোকে আল্লাহর পছন্দ,হাদীসের আলোকে আল্লাহর পছন্দ,কুরআনের আলোকে আল্লাহর অপছন্দ,হাদীসের আলোকে আল্লাহর অপছন্দ-
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, আমরা যাতে আমাদের জীবনের
সামগ্রিক ও পরিপূর্ণ কল্যাণ অর্জনে সহযোগিতা গ্রহণ করতে পারি, সেজন্য আল্লাহ আমাদের মাঝে আসক্তি ও কামনা-বাসনা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তিনি আমাদের ভিতর খাবারগ্রহণ ও খাবারের স্বাদ গ্রহণের আসক্তি সৃষ্টি করেছেন। এটি আল্লাহর এক মহা নেয়ামত। এর মাধ্যমেই দুনিয়াতে আমাদের শারীরিক শক্তি ও অস্তিত্ব টিকে থাকে। তদ্রƒপ আমাদের মাঝে তিনি বিবাহ ও তার মাধ্যমে উপকৃত হওয়ার আসক্তি সৃষ্টি করেছেন। এটিও মহান আল্লাহ -র অসামান্য এক নেয়ামত। এর মাধ্যমে মানবজাতির বংশপরিক্রমা অব্যাহত থাকে। অতএব, এসকল বিষয় থেকে আমরা যখন আল্লাহ -র আদেশ ও নির্দেশ মোতাবেক উপকৃত হব, তখন সেটা হবে আমাদের দুনিয়া- আখেরাত উভয় জগতের সৌভাগ্যের কারণ; আমরা অন্তর্ভুক্ত হব সেইসব বান্দার, যাদেরকে আল্লাহ বিশেষ নেয়ামতদানে ধন্য করেছেন।
বইটিতে উপভোগ্য ভঙ্গিতে পর্দার আদ্যোপান্ত ও মা-বোনদের মুখাবয়ব ঢেকে রাখার আবশ্যিকতার বিষয়টি শরিয়তের অকাট্য প্রমাণাদি ও শিক্ষণীয় ঘটনাবলির বর্ণনাসহ তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি ইসলামের সঠিক দিকনির্দেশনাও উল্লেখ করা হয়েছে। শব্দের চতুর্সসিক বাহুল্য নয়, হৃদয়গ্রাহী ও গতিময় গদ্যে উপস্থাপিত হয়েছে রচনার প্রতিটি ছত্র।
ইবটি নবীচরিত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট বড় বড় কিছু কাহিনীর অনবদ্য সংকলন। প্রতিটি কাহিনী হাদীস, সীরাত বা ইতিহাসের বিশুদ্ধ গ্রন্থাবলী থেকে চয়নকৃত। টীকায় কাহিনীর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি সংযোজিত [উদ্যোগটি বাংলা ভাষার বই-পুস্তকে এ-ই প্রথম]। প্রতিটি কাহিনীর প্রতিপাদ্য বিষয় নবীজীর মহত্ত্ব, সততা, উদারতা, দৃঢ়তা ও বিস্ময়তা।